নারীর চরম পুলক ও বিবর্তন

" নারীর চরম পুলক ও বিবর্তন " 




বিবর্তনের দৃষ্টিতে নারীর অর্গাজমের গুরুত্ব বের করতে গেলে বেশ বড়সড় ধাক্কা খেতে হয়। এত নিত্য ও প্রত্যহিক একটা অনুভূতিকে বিবর্তনের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করা এত জটিল কারণ এর প্রত্যক্ষ কোনো উপকারীতা নেই। 

পুরুষদের অর্গাজমের সাথে স্পার্ম নিঃসরণের সম্পর্ক আছে। অর্গাজমে পুরুষ সুখ পায়, তাই সে তা বারবার করে, আর বারবার করতে যেয়ে বেশি বংশবিস্তার করে ফেলে। এটাকে adaptation of craving / lust বলা চলে। কিন্তু নারীরা কিন্তু তাদের অর্গাজমের সময় কোনোরকম ডিম্বাণু নিঃসরণ করে না। ডিম্বস্ফোটন সম্পূর্ণভাবে নারীদের নাগালের বাইরে। তাই নারীদের ক্ষেত্রে এই কথাটা খাটে না যে, তারা বেশি সেক্স করার নেশায় মত্ত হলে বেশি সন্তান দিবে। 

এটাকে কিছু বিজ্ঞানী সম্পূর্ণ নিষ্প্রয়োজন মনে করেন। এটাকে তুলনা করেন পুরুষদের স্তনের বোটার সাথে যা তার কোনো উপকারে লাগে কিন্তু তাও আজীবন বয়ে বেড়ায়। পুরুষের স্তনের বোটার রহস্য হচ্ছে, প্রথম কয়েক সপ্তাহ লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিশু একই ব্লুপ্রিন্ট দ্বারা নির্মিত হয়। গেস্টেশনের ৬-৭ সপ্তাহ সময়ে Y chromosome এর বিশেষ একটা জিন টেস্টিস সৃষ্টি করতে শুরু করে এবং তা পরবর্তীতে এবডমেন থেকে নিচের দিকে চলে যায়। কেনো নিচে চলে যায়? 

স্পার্ম বেশি তাপের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে না বলে ঠান্ডা স্থানে যায়। আর আমাদের অতিদূর কমন এনসেস্টররা মাছ জাতীয় প্রাণী ছিলো— যাদের স্পার্ম ভেতরেই সৃষ্টি হতো— বলে এই সমস্যাটা দেখা যায়। laryngeal nerve এর অপ্রয়োজনীয় দৈর্ঘ্য, appendix এর বিপদ vestiges এর মধ্যে পড়ে। মানে এটা প্রাণীর বিবর্তনের অপ্রয়োজনীয় জিনিস বা লেফওভার। এর সাথে তুলনা করে অনেক বিজ্ঞানী বলেন যে, নারীর অর্গাজম জিনিসটাও পুরুষের বোটার মত নিষ্প্রয়োজনীয়। এক সেন্সে এটা সঠিক মনে হয় বটে। পুরুষের বোটা তেও প্রচুর সুরসুরি কাজ করে। তবে আমরা আরো কিছু মতামত জানতে চাই। 

অনেক বিজ্ঞানী এটা মনে করে যে, এর উপকারীতা আমাদের বহুপ্রাচীন এনসেন্সটরদের মধ্যে ছিলো কিন্তু এখন তা নেই। যেমন, নারীদের হাইমেনের/ সতীচ্ছদের উপকারীতা বিবর্তন দিয়ে এখনো ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, তেমনি অর্গাজমের উপকারীতাও ব্যাখ্যা করা এখনো সম্ভব না। এখনো সম্ভব হয়নি মানে কিন্তু এই না যে তা সম্ভব না! একটা এডুকেটেড হাইপোথিসিস হচ্ছে এই যে, এর প্রয়োজন এক সময় ছিলো কারণ অনেক প্রজাতির স্ত্রী প্রাণীরা যৌন উত্তেজিত হলেই ডিম্ব ফোঁটায়। যেমন খরগোশ সহ নানান প্রাণীতে এটা দেখা যায় যে, তারা যৌন উত্তেজিত হলে নানান হরমোন রিলিজ করে, যার ফলে ডিম্বস্ফোটন ঘটে। মানব নারীদেরও ডিম্বস্ফোটনের সময় নানান মানসিক ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তবে অর্গাজম এখনো এক রহস্য। 

এটা মানসিক কোনো এডাপটেশন হতে পারে নাকি সেটাও ঘেটে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। এবং দিয়েছেন কয়েকটা হাইপোথিসিস। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে, " Right man hypothesis "। এটার মূল নীতি হচ্ছে, সেক্সুয়াল সিলেকশনে যেহেতু নারীরা পুরুষকে নির্বাচন করে তাই তার যৌনসুখ ও অর্গাজম তাকে সঠিক পুরুষ নির্বাচন করতে সাহায্য করে। এরকম আরো কয়েকটি হাইপোথিসিস আছে যা প্রায় একই কথা বলে। 


তো সারমর্ম হচ্ছে, আমরা এখনো নিশ্চিত জানি না নারীর অর্গাজমের বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা কি! পুরুষের অর্গাজম পানির মত সরল ও ঝড়ের মত ক্ষিপ্র। কিন্তু নারীদের অর্গাজম শিল্পকলা পর্যায়ে পড়ে। তা হয় দীর্ঘস্থায়ী, ঋণাত্মক, বিলাসী। হরেকরকম পদ্ধতির মাধ্যমে একজন নারী যৌনসুখ পায়। তবে কেনো পায় তা বিবর্তনের চোখে বেশ রহস্য। হয়তো এটা নারীদের শৌখিনতা। তবে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। কে জানে কি লীলা নিহিত রমনীকুলের অনুভূতির তরে...

আরো বিস্তারিত জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে পারেনঃ- 

No comments:

Post a Comment

Pages